বিএনপির নেতৃবৃন্দ আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল গাজীপুর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের দৃষ্টিতে এই নির্বাচনে কারচুপি হলে, নির্বাচন খুলনার মতো হলে তারা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচিতে যাবে। এমন কথা এসেছিল বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভীর পক্ষ থেকে। গাজীপুরে পরাজিত বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারও বিএনপি নেতৃবৃন্দের ওই কথার প্রতিধ্বনি করেছিলেন নিজের নির্বাচনী প্রচারণায়।
তিনি দাবি করেছিলেন এখান থেকেই পতনের শুরু হবে সরকারের। এমনকি বিএনপি নেতৃবৃন্দ আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় সিলেট, বরিশাল, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চূড়ান্ত করে রাখলেও ঘোষণা করেননি। ঘোষণার জন্য দিন ঠিক করা ছিল নির্বাচনের পরদিন আজ ২৭ জুন। স্বভাবতই নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর বিএনপি ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। নির্বাচনকে কলঙ্কিত বলতেও ছাড়েনি তারা।
তবে হার্ডলাইনে আন্দোলনের ঘোষণা আসেনি বিএনপির পক্ষ থেকে। বরং দুপুরেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর ঘোষণা করেছেন আগামী তিনটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন তারা।বিএনপি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল নির্বাচনের দিন রাতেই বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বিপুল ব্যবধানে পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর আলোচনায় বসেছিল দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। ভারত বিরোধী দলটির কয়েকজন নেতা বলেছিলেন আমরা এখান থেকেই ঘোষণা দেই আর নির্বাচনে যাব না।
কয়েকজন বলেন, এমন নির্বাচন করে আমাদের শুধুই টাকা নষ্ট হচ্ছে। এর চেয়ে আন্দোলন করেও লাভ হতো। নির্বাচন করে তো কোনো লাভ হচ্ছে না। এই মতাবলম্বীদের দলে প্রধান ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একই মত দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ। ওই সময় আলোচনায় উপস্থিত হন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু। তিনি এর বিরোধিতা করে বলেন, না, নির্বাচন আমাদের করতেই হবে।
ভারতের সঙ্গে আলোচনা অনুযায়ী আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে যেয়ে আমরা কিছু করতে পারব না। হুমকি দেওয়া, বর্জন, আন্দোলন করা এমন কিছু করা যাবে না। এমনটি ঘটলে ভারত কোনো ধরনের সহায়তা করবে না। এর পরই ওই আলোচনায় বিএনপির নেতৃবৃন্দরা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আগামী তিন সিটি নির্বাচনে যাবে।সম্প্রতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা ভারত সফর করে এসেছেন। ওই সফরে দেশটির ক্ষমতাসীন দলসহ উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
শুধুমাত্র ভারতের নির্দেশনার কারণেই এই মুহূর্তে বিএনপি বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে যাবে না। বড় ধরনের কোনো আন্দোলনকেই ভারত নেতিবাচক হিসেবে নিতে পারে বলে মনে করে বিএনপির ভারতপন্থী নেতৃবৃন্দ।শুধু নির্বাচনের বিষয়ই নয়, সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দু-একটি নিয়োগ, রদবদল নিয়েও বিএনপির প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র ভারতের নির্দেশেই সেখান থেকে সরে আসে তারা। এক কথায় বিএনপি এখন চলছে ভারতের গাইডলাইন অনুযায়ী।
ভারতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির এমন চলা নিয়ে দলটির মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেক বিএনপির নেতার প্রশ্ন, এটি বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য করা হচ্ছে, নাকি আওয়ামী লীগকে জায়েজ করার জন্য তাঁদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের মতে, এভাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার কোনো সম্ভাবনা নাই।জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির যে অংশ চলছে মূলত তারাই ভারতের নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করছে।
-বাংলা ইনসাইডার